মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ - ১৫:২১
উদারনীতির অধীনে নারীর অবস্থা: স্বাধীনতা নাকি শোষণ?

হাওজা / নারী ও পরিবারের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক এবং চলমান নৃশংসতার জন্য পশ্চিমাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে নারীর মর্যাদা প্রতিটি যুগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নারীর অধিকার রক্ষার দাবিদার পশ্চিমা ব্যবস্থা, বিশেষ করে উদারনীতির প্রভাবে নারীদের প্রতি দ্বিধাহীন নীতি গ্রহণ করেছে।স্বাধীনতা, অধিকার ও সাম্যের বাহ্যত স্লোগানের আড়ালে নারীকে একটি বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত করা হয়েছে যা পুরুষের ভোগ ও বস্তুগত লাভের জন্য বলি দেওয়া হয়েছে।
ইসলামী বিপ্লবী নেতা সাইয়েদ আলী খামেনির এ বক্তব্য বিবেচনা করলে তা স্পষ্ট হয় যে ইসলামি বিশ্বের উচিত এ ব্যাপারে রক্ষণাত্মক নয়, আক্রমণাত্মক অবস্থান নেওয়া।
উদারনীতি একদিকে নারী অধিকারের স্লোগান তুলেছিল; কিন্তু অন্যদিকে তারা তাদের সম্মান ও প্রতিপত্তিকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে।
স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা বিশ্ব নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাধীনতা হরণ করে ভোগবাদের অধীন করেছে। বিজ্ঞাপন, বিনোদন এবং ফ্যাশনের জগতে নারীদেরকে "ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর" হিসেবে উপস্থাপন করা আসলে তাদের মূল্যকে একটি নিছক পণ্যে পরিণত করা।
পশ্চিমা ঐতিহ্যে নারীর অধিকারের স্লোগান থাকলেও বাস্তবতা হলো তাদের মর্যাদা বাজারজাত পণ্য হিসেবে পরিমাপ করা হয়।
মাইকেল স্যান্ডেল এবং উইলিয়াম গার্ডনারের বইগুলি ব্যাখ্যা করে যে কীভাবে পুঁজিবাদ পশ্চিমা বিশ্বে নারীর অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে। তার মতে, এই ব্যবস্থা নারীদের স্বাধীনতার নামে আরও দাসত্বের দিকে ঠেলে দেয়, যেখানে তাদের সম্পূর্ণ পরিচয় একটি বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্বে ঢালাই করা হয়।
ইসলাম নারীর অধিকার তাদের মর্যাদা এবং পারিবারিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে দৃঢ় দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে।
ইসলাম অনুসারে, একজন নারীর মর্যাদা শুধুমাত্র একজন মা, স্ত্রী বা বোন হিসেবেই সম্মানিত নয়, একজন ব্যক্তি হিসেবে তার অধিকারও সুরক্ষিত।
ইসলামী ব্যবস্থা "স্বাধীনতার" নামে শোষণের পরিবর্তে নারীদের প্রকৃত স্বাধীনতা দেয়, যা তাদের মর্যাদাকে উন্নীত করে এবং তাদেরকে পুরুষের সমকক্ষে নিয়ে আসে।
ইসলামী বিপ্লবী নেতার বক্তব্য যে "আমরা প্রতিরক্ষামূলক নয় বরং আক্রমণাত্মক অবস্থানে আছি" একটি কৌশল নির্দেশ করে।
 নারী অধিকারের নামে তাদের শোষণকে স্বাভাবিক করে তোলা পশ্চিমাদের দাবিগুলো বিশ্লেষণ ও খণ্ডন করা প্রয়োজন।
উদারনীতিবাদের অধীনে নারীর মর্যাদার অবক্ষয়ও পরিবার ব্যবস্থায় বড় প্রভাব ফেলেছে।
পাশ্চাত্যের পরিবার ব্যবস্থার বিচ্ছিন্নতা, বিবাহবিচ্ছেদের ক্রমবর্ধমান হার, পিতামাতা ও সন্তানদের মধ্যে দূরত্ব প্রমাণ করে যে উদারনৈতিকতা পরিবারের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করছে।
উইলিয়াম গার্ডনারের বই "দ্য ওয়ার অন ফ্যামিলি ভ্যালুস" ব্যাখ্যা করে কিভাবে পশ্চিমা সমাজ পরিবার ব্যবস্থার শিকড়কে ধ্বংস করছে। পশ্চিমা বিশ্বকে নারীর প্রতি ঐতিহাসিক নৃশংসতার জবাব দিতে হবে।
ইসলামি বিশ্বের উচিত নারীদের ব্যাপারে ইসলামী আদর্শ বিশ্বস্তরে উপস্থাপন করা, যেখানে তাদের সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার সুরক্ষিত থাকে।
স্বাধীনতার নামে নারীদের শ্লীলতাহানির দিকে ঠেলে না দিয়ে তাদের আসল অবস্থান ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের দাবি।
উদারনীতির চাকচিক্যময় শ্লোগানের আড়ালে লুকিয়ে থাকা বাস্তবতাকে উন্মোচিত করা এবং নারীর প্রকৃত স্বাধীনতা ও মর্যাদা তুলে ধরাই ইসলামী বিশ্বের প্রধান দায়িত্ব। এই পথই একজন নারীকে বাণিজ্যিক বস্তু থেকে একজন সম্মানিত মানুষে রূপান্তরিত করতে পারে।
হজরত ফাতিমা জাহরার জীবন নারীদের জন্য সম্মান, মর্যাদা ও প্রকৃত স্বাধীনতার এক নিখুঁত উদাহরণ। তার জীবন আমাদের শেখায় যে, চরিত্র, নৈতিকতা এবং দৃঢ় বিশ্বাসের মাধ্যমে একজন নারী শুধু তার অবস্থানই বাড়াতে পারে না, সমাজে সম্মান ও মর্যাদার প্রকৃত নিশ্চয়তাও পেতে পারে। আজকের যুগে তাদের শিক্ষা গ্রহণই নারীর সাফল্য ও মর্যাদা অর্জনের সর্বোত্তম উপায়।

মজিদুল ইসলাম শাহ

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha